৩ সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ, তদন্তে মিলছে ভয়াবহ তথ্য!

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ৩ সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে (৩৫) গণধর্ষণের অভিযোগে মোখলেছুর রহমান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে ভিন্ন জেলার অধিবাসী ওই অভিযোগকারী গৃহবধূকে তদন্ত কর্মকর্তা নিরাপদ হেফাজতে রাখার আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল মামুন পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে তার স্বামীর জিম্মায় প্রদান করেন।

অন্যদিকে একই দিন আদালতে এক নারীর দেওয়া জবানবন্দির তথ্যে বিষয়টি নাটকীয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আর তদন্তেও মিলছে ভিন্ন তথ্য- এমন দাবি পুলিশের।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জামালপুর শহরের বগাবাড়ি বোর্ডঘর এলাকার ওই গৃহবধূ শুক্রবার বিকেলে জামালপুর ব্রিজ থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে সদর উপজেলার মুন্সীরচর এলাকার ইয়াসিনের (৩৫) সিএনজিতে উঠলে ইয়াসিন কৌশলে কৃষ্ণপুরের দিকে গিয়ে ওই গাড়িতে মালিক স্থানীয় জুয়েল মিয়াকে উঠায়। এরপর নন্দীরবাজার থেকে একই গাড়িতে মুন্সীরচর এলাকার হামিদুল (২২) ও মোখলেছকে (২৬) উঠায়। এরপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই গৃহবধূকে নালিতাবাড়ীর সূর্যনগর এলাকার কাশেমপুর বাজার সংলগ্ন ব্রিজের পাশে থাকা হামিদুলের এক খালার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যায় তালাবদ্ধ করে রাখে। রাতে হামিদুল ও মোখলেছ ওই ঘরে গিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। শনিবার সকালে ইয়াসিন ও জুয়েল সিএনজি নিয়ে গিয়ে হামিদুল ও মোখলেছসহ গৃহবধূকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে এসে নানাভাবে চাপ দিয়ে ফের জামালপুর ব্রিজে নামিয়ে দেয়। পরে ওইদিনই ওই গৃহবধূ নালিতাবাড়ী থানায় ৪ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোখলেসুর রহমানকে গ্রেফতার করে। রবিবার গ্রেফতারকৃত মোখলেছকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া একই সময়ে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আসামি হামিদুলের আত্মীয় ও গৃহবধূকে নিয়ে ওঠা বাড়ির মালিক মনোয়ারা বেগম (৬০) এর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। একই দিন জেলা সদর হাসপাতালে গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

এদিকে আদালতে দেওয়া সাক্ষী মনোয়ারা বেগমের জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, ‘হামিদুল আমার পূর্বপরিচিত হওয়ায় খালা বলে ডাকতো। বউ নিয়ে বেড়ানোর কথা বলে সে ওই গৃহবধূকে আমার বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। সাথে নিয়েছিল মিষ্টি। স্বামী-স্ত্রী ভেবেই তাদের থাকতে দিয়েছিলাম। অন্য কিছু জানিনা।’ আর এতেই শুরু হয়েছে ঘটনা নিয়ে নানা শোরগোল।

অভিযোগ উঠেছে, ওই গৃহবধূ তার স্বামীর বন্ধু মোখলেছকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মোখলেছ তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে হামিদুলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে মোখলেছকে নিয়ে নালিতাবাড়ীতে হামিদুলের এক পূর্ব পরিচিত মহিলার বাড়িতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মেলামেশা করে। এরপর নাটকীয়ভাবে ফাঁসাতে হামিদুল ও মোখলেছসহ আরও ২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সরোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হওয়ায় এজাহারনামীয় একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে ভিন্ন জেলার অধিবাসী হওয়ায় তাকে নিরাপদে হেফাজতে রাখার আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে আদালতে দেওয়া একজন সাক্ষীর জবানবন্দিসহ এখন তদন্তে মিলছে ভিন্ন তথ্য। আশা করছি চূড়ান্ত তদন্তে প্রকৃতটা বেরিয়ে আসবে।

Share